আমি খুব সাধারণ ঘরের খুব সাধারন একজন ঘরণী, ঘরনিবলছি কারণ আমি স্বামী সন্তান সংসার সব নিয়ে এতদিন ছিলাম, বর্তমানে আমার বয়স প্রায় ৬৩ বছর আমি ছোটবেলায় যা দেখেছিলাম তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। খুব অবাক লাগে যখন দেখি মানুষ এখন এত ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে যে, চারপাশে লোকের কি হচ্ছে নাহচ্ছে দেখার সময় নেই,তখন একটু তো অবাক হই।
ছোটবেলায় যেখানে বড় হয়েছি, সেটা ছিল ছোট্ট এক কলোনি। যেখানে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পরিবার এসে বসবাস করতে, সেই জন্য আমি বাংলাদেশের অনেক ভাষা বুঝতে পারি । আমার যখন প্রায় দু আড়াই বছরবয়স, তখন থেকে দেখতাম পাড়ায় প্রত্যেকটা বাড়িতে আমরা বাচ্চারা অবাধে যাওয়া আসা করতাম । কেউ কখনো ভাবি নি যে এটাআমার বাড়ি নয় বা এখানে আমারযাওয়াটা উচিত না । এখনসেই মানুষ অনেকটা বদলে গেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ।
ছোট্ট পাড়া মাত্র ২০-২২ টাঘর নিয়ে। পাড়ার প্রত্যেকের মধ্যে এত ভালোবাসা ছিল যে, সকলের বিপদেসবাই এগিয়ে যেত, যেমন ধরুন কারোর ছেলে হয়তো চাকরির পরীক্ষা দিতে যাবে বা কলেজে পরীক্ষাদেবে, কিন্তু বাড়িতে রান্না করে দেবার মতন পরিস্থিতি ণেই, অনায়াসে পাশের বাড়িরলোককে বলা যেত- তুমি আমার ছেলেকে আজকের খাবার টা দিও বাকোন বাড়ির বয়স্ক মানুষ প্রাইমারি স্কুলের টিচার, কিন্তু তার বাড়িতে রান্না করে দেবার লোক নেই। তাকে দেখেছি আমার মায়ের কাছে প্রতিদিন সকালবেলায় ভাত খেয়ে স্কুলে যেতে। কারুর অসুখ হলে সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়ত। আবার বিপরীতটাও দেখেছি সবাই মিলে একসঙ্গে কোন একটি পরিবারের বিরুদ্ধে দলগত ভাবে আক্রমণ করছে।
পুজোরসময়, ঠাকুর দেখতে যাব বাড়ির লোক সঙ্গে ছিল না পাড়ার লোকেরাইনিয়ে যেত। বাড়ির কেউ চিন্তাও করতো না। রাস্তা পার হওয়ার সময় হয়তো পড়ে গেছি। সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত কেউ এসে তুলেছে। এবার আমাকে বলছে দুঃখ পাইছো ? ব্যাথাকে সেসময় অনেকে দুঃখ বলতো।এখন ভাবতে খুব মজা লাগে ,তখন আমার বয়স কত হবে ! সাতকি আট আমার বাড়ির পেছনে এক পরিবার থাকতো। তাদের ছেলের বিয়ে হয়েছে। আমি তাদের কাকু বলি। এবার ওনার স্ত্রী আমার কাকিমা হলেন। তাদেরও এমন কিছু বয়স না। বিয়ের পরে তারা প্রথম সিনেমা দেখতে যাবে তারা বলেছে, আর আমার মা কিন্তু কিছুনা ভেবেই আমাকে তাদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এবং সিনেমাটা ছিল লব কুশ।
এইসমস্ত কিছু বলার পিছনে যে উদ্দেশ্য, সেটাহলো যে, একটা সময় আমাদের জীবন কত সরল ছিলআমরা কাউকে সাহায্য করার আগে কখনো ভাবতাম না যে বিনিময়সে আমাদের কিভাবে গ্রহণ করবে? পরিস্থিতি তখন খুবই কঠিন ছিল। সেই সময় বাংলাদেশ থেকে সব শরণার্থীরা ভারতেআসছে এবং সরকারি উদ্যোগে তারা বাংলাদেশ থেকে এসে তাবুতেই আশ্রয় পেয়েছিল। সেখান থেকে সরকারিভাবে তাদেরকে জায়গা দেওয়া হয় যেখানে তারা বসবাস শুরু করে। নতুন একটা দেশে কোন রকমের সুব্যবস্থা ছাড়াই নতুনভাবে সংসার পাতা সহজ ছিল না। মানুষের জীবিকার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি টালমাটাল ছিল। কিন্তু তার মধ্যেও মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা ছিল, যে সহমর্মিতা ছিল, যে বিশ্বাস এবংভরসা ছিল তা হয়তো আজকোথাও বিঘ্নিত হয়েছে। যেহেতু এই সংকলনে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব, সাহচর্য ও সহমর্মিতার বিষয়েআলোচনা করতে বলা হয়েছিল তাই সেই প্রেক্ষিতেই আমার এই লেখা। এবিষয়ে আরো অনেক কিছুই লেখার ছিল, খুব শীঘ্রই পরবর্তী লেখায় আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং মতামত ব্যক্ত করব ধন্যবাদ।
কলমেঃ মীনা দাস
লোকসংগীতশীল্পি (দীর্ঘ ৩০ বছর নিজস্ব লোকসংগীতের দল পরিচালনা করছেন)। একাধারে নিজ স্বাধীন ব্যবসার সাথে NGO পরিচালনা করে চলেছেন।
Mina is a folk singer. She's a successful business owner.
Committed to her NGO for social change.
❤️
অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার অভিজ্ঞতা অমূল্য। 🙂